০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৪:০৮:২৫ পূর্বাহ্ন


বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
‘‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এরা কি করে গণতন্ত্র দেবে?"
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৩
‘‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এরা কি করে গণতন্ত্র দেবে?"


যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রশ্ন নয়, বর্তমান সরকার জনগনের কাছে জবাবদিহি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর। রোববার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নীতির প্রসঙ্গ টেনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই প্রশ্নে তুলেন।

 

তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন যে,  যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি করেছে, করুক, আমাদের কিছু যায় আসে না। ভিসানীতি আমরাও করতে পারি। উত্তর কি দিবো বলেন? এখন আপনারাও ভিসা নীতি করেন না দেখি। ঠিক আছে। প্রশ্নটা সেটা না। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, এটা ভিসানীতিরও প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে যে, আপনার বিবেকের প্রশ্ন, জাতির বিবেকের প্রশ্ন ‘আই একাউন্টেবল ইউএসএ না’, ‘আই একাউন্টেবল টু মাই পিপল’। আমার জনগনের কাছে একাউন্টেবল কিনা বলেন.. এটাই যথেষ্ট। জনগন কি বলছে? আমি ভোট দিতে পারছি না। জনগন কি বলছে যে, আমার ওপর অত্যাচার হচ্ছে-নির্যাতন হচ্ছে, অন্যায়ভাবে আমার কাছ থেকে ট্যাক্স আরোপ করে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে, কোটে গেলে আমি ন্যায় বিচার পাই নাৃ এ বিষয়গুলো আমাদের আজকে বড় সমস্যা করছে।”

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এরা কি করে গণতন্ত্র দেবে? এরা বার বার করে বলে যে, আমরা নির্বাচন দিচ্ছি তো একটা ভালো নির্বাচন হবে কথা দিচ্ছি। আরে মানুষ বিশ্বাস করবে কি করে তোমাদের তোমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। কোন দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ভালো নির্বাচন করেছে? কোনো দিন না। দেখুন প্রত্যেকটা নির্বাচন ইভেন কি ’৭৩ সালে তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে।গণতন্ত্রকে ধবংস করে তোমরা এক দলীয় বাকশাল করেছো, তখনও তোমরা ত্রিশ হাজার মানুষ তোমরা রক্ষী বাহিনী দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছো, তোমাদের দুঃশাসনের কারণে সেদিনও দুর্ভিক্ষ হয়েছে মানুষকে খাবার দিতে পারোনি। এখন কি করছে? গত ১৪ বছর ধরে স্টিমরোলার চালাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ওপরে। সো-কোল্ড ডেমোক্রেসি ফর দ্য ইলেকশনের কথা বলে। এখন আবার নতুন ধোঁয়া তুলেছে যে, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য তাদের নাকি থাকা উচিত।”

 

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘চির ভাস্বর শহীদ জিয়া, জ্যোতির্ময় খালেদা জিয়া, দীপ্তিমান তারেক রহমান’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। গ্রন্থের লেখক হচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমান ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল হাসনাম মো: শামীম। গ্রন্থটির প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থা। ১৯১ পৃষ্ঠার গ্রন্থে মূল্য রাখা হয়েছে পাঁচ শত টাকা।

 

‘বিদেশীদের কাছে আমরা যাই না’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদেরকে বলে যে, আমরা নাকি বিদেশীদের কাছে যাই। আমরা বিদেশীদের কাছে যাই না। মাঝে মধ্যে বিদেশীরা আমাদের ডাকেন। জানতে চান যে, দেশে কি হচ্ছে? তোমরা  কি করছো? এটা স্বাভাবিক যেকোনো দেশ তারা এগুলো জানতে চাইবে আর যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে তারা জানতে চাইবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষিত নীতি হচ্ছে যে, পৃথিবীতে তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। সুতরাং তারা তাদের কাজ করছে। যেখানে গণতন্ত্র নাই সেখানে তারা গণতন্ত্র নাই সেকথা বলে দেন, তাদেরকে গণতন্ত্রের সম্মেলনে ডাকেন না, তাদের স্যাংশন-ট্যাংশন কিসব দেন।”

 

বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আমরাই মনে করি যে, এখানে জনগনের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, এখানে ভোটের অধিকার দেয়া হচ্ছে না, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আজকে দেখেন পত্রিকায় আছে, একজনকে নিয়ে গেছে, নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ডিবি। এখন হাসপাতালে দিয়ে এসেছে। গত দুইদিন আগে চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশে এসেছিলো ছাত্র দলের মেয়ে এসেছিলো। সমাবেশে শেষে ওখানে থেকে সে ফিরে যাচ্ছিল মীরেরশ্বরাইতে, ওখানে তার সিএনজি আটকিয়ে তাকে নামিয়ে ছাত্রলীগ-যুব লীগের ছেলেরা তার ওপর অত্যাচার করেছে কয়েক ঘন্টা একটা বাসায় আটকিয়ে রেখেছে। তার মা খোঁজ পাওয়ার পর যখন গেছেন তখন তাকে থানায় নিয়ে গেছে। থানাওয়ালা করেছে কি? তারা একটা পুরনো মামলায় তাকে আসামী করে জেল হাজতে আটকিয়ে রেখেছে, পরেরদিন কোটে দিয়েছে। আর আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। দি কল্ড জুডিশিয়ারি, এটাই হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা। য়েখানে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একটা মেয়েকে আটক করে নির্যাতন করে তাকে আবার কারাগারে পাঠায়। এই রাষ্ট্রে এই সমাজে কি করে গণতন্ত্রের কথা বলবেন, কি করে এখানে নিজের অধিকারের কথা বলবেন।”    

 

‘এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতার সিংহাসন’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘জামালপুরের বকসীগঞ্জে আজকে বড় বড় ছবি বেরিয়েছে পত্রিকায় যে চেয়ারম্যান বাবু (মাহমুদুল আলম বাবু ) তার যে সিহাংসন  এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা। যারা এই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এই বিষয়গুলো আমরা বলছি, আমাদের মিডিয়া-সাংবাদিক ভাইয়েরা বলছেন, সবাই বলছে কিন্তু তাদের(সরকারের) কানে যাচ্ছে না।”

 

তিনি বলেন, ‘‘আজকের এই সংকট শুধু বিএনপির না, এই সংকট শুধু তারেক রহমান বা বেগম খালেদা জিয়ার না। এই সংকট গোটা জাতির, জাতির এখন চরম বিপদ আছে এই পথ থেকে উদ্ধার করতে হবে। দেশকে উদ্ধারের জন্য তারেক সাহেব যে ডাক দিয়েছেন এটা আমার কাছে মনে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কি বলেছেন, অন্য কোনো কিছুতে ফয়সালা হচ্ছে না, ফয়সালা রাজপথেই হবে। আরেকটা বলেছেন যে, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। অর্থাত যে বাংলাদেশ ছিলো আমাদের, একাত্তরের যুদ্ধে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা যে বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্য কাজ শুরু করেছিলাম জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে, সেই বাংলাদেশ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা করতে চাইৃ আমি কথা বলতে চাই, আমি ভোট দিতে চাই, আমি যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে চাই, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে চাই. এটাই হচ্ছে আমাদের চাওয়া।”

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলামের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক আবদুল হাসনাত মোহা: শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন